বীমা পেশায় সফলতার উপায়

বীমা পেশায় সফলতার উপায়
Oplus_131072

এস এম নুরুজ্জামান:

বীমা পেশায় প্রত্যেক/কর্মী/কর্মকর্তা সফলতা চায় কিন্তু সবাই সফল হয় না। সফলতা চাইলেই পাওয়া যায় না। সফল হতে হলে কিছু বিষয় মনে ধারণ ও পালন করতে হয়, যেমন-

১) সফল হওয়ার জন্য লক্ষ্য স্থির করা জরুরী।

২) অদম্য সাহস আর দুর্নিবার ইচ্ছা শক্তি থাকতে হবে।

৩) সম্মোহনী ব্যক্তিত্ব থাকতে হবে।

৪) কোন প্রকার সংশয়, বাজে চিন্তা, ভয়-ভীতি, আলস্য দূর করতে হবে।

৫) নিজের উপর প্রবল আত্মবিশ্বাস থাকতে হবে।

৬) সকলের নিকট বিশ্বস্ত হতে হবে।

৭) মানুষকে গুরুত্ব দিতে হবে।

৮) স্বপ্ন দেখতে হবে। ভারতের রাষ্ট্রপতি ড. এপিজে আবদুল কালাম এর মতে স্বপ্ন সেটা যা মানুষকে ঘুমাতে দেয় না।

৯)  সফলতার আরেক নাম বিশ্বাস:

নোবেল পুরষ্কার বিজয়ী আইরিশ নাট্যকার বার্নার্ড শ মাত্র ৫ বছর বয়সে স্কুলে লেখাপড়া করছেন। দারিদ্রতার কারণে মাত্র ১৫ বছর বয়সে মাসে আমাদের টাকার হিসেবে ১০ টাকা বেতনে কেরানীর কাজ নেন। কিন্তু তিনি লেখক হতে চেয়েছিলেন এবং বিশ্বাস করতেন একদিন তিনি একজন বড় লেখক হবেন। তাই তিনি প্রতিদিন নিয়মিত লেখা শুরু করেন। লেখক হিসেবে প্রতিষ্ঠা লাভ করতে তার ৯ বছর লেগেছিল। লেখক জীবনের প্রথম ৯ বছরে তার লেখা থেকে আয় হয়েছিল আমাদের টাকার হিসেবে মাত্র ৩০০ টাকা। কিন্তু তার বিশ্বাসই তাকে এগিয়ে নিয়ে গেছে। লেখক হিসেবেই পরবর্তী সময় উপার্জন করেছেন লাখ লাখ টাকা। এরকম হাজারো সফলতার উদাহরণ সামনে রাখলে উপরোক্ত বিষয়গুলো যে তারা মনে ধারণ ও পালন তার প্রমাণ মিলবে।

সময়ানুবর্তিতা হতে হবে, সময়কে কাজে লাগাতে হবে, গুছিয়ে কাজ করতে হবে। সময়ের অপচয় রোধ করতে হবে।

দীর্ঘসূত্রিতা এড়াতে হবে-আজ করব, কাল করব, সকালে করব, বিকালে করব। তাই করি করি করে আর করা হয় না।

বীমা পেশায় জ্ঞানার্জন জরুরী। পবিত্র কোরআন বলে: যারা জ্ঞানী আর যারা জ্ঞানী নয় তারা উভয়ে কি এক হতে পারে? (সূরা- যুমার, আয়াতঃ ৯)

পবিত্র কোরআনে আরো বলা হয়েছে: “যদি তোমরা না জান, তবে যারা জানে তাদের কাছে  জিজ্ঞেস কর।” (সূরা-আল আম্বিয়া, আয়াত-৭)

প্রশিক্ষণ নিয়ে দক্ষতা অর্জন করতে হবে:

বর্তমানে প্রশিক্ষণ ও উন্নয়ন একসাথে চলে। পেশাগত দক্ষতা উন্নয়ন, দায়িত্ব পালনে পারদর্শিতা উন্নয়ন, প্রশিক্ষণের প্রধান স্তম্ভ হলো- Aim, Instruction, Practice, Exercise, Discipline.

বক্তব্য দিতে জানতে হবে:

সুবক্তা মাধ্যমে বীমার সফলতা মানুষের কাছে উপস্থাপন করা যেতে পারে। সত্যিকার অর্থে যারা বীমা পেশায় জড়িত আছেন তারা সুকৌশলী এবং সুবক্তা। মনে রাখতে হবে বক্তব্য হতে হবে জ্ঞান নির্ভর।

বীমা পেশা চাকুরী নয়, ব্যবসা। পবিত্র কোরআন বলেন: “যখন নামাজ পড়া শেষ হবে, তখন তোমরা যমীনে বেরিয়ে পড়ো আর আল্লাহর অনুগ্রহ সন্ধান করো এবং আল্লাহকে বেশি বেশি স্মরণ করো, আশা করা যায় তোমরা সফল হবে” (সূরা-৬২, আল জুমুয়া:১০)

বিশ্বনবী মুহাম্মদ রাসূলুল্লাহ (সঃ) ব্যবসায়ও শ্রমের মাধ্যমে উপার্জন করাকে এবং উপার্জনকারীদের সু-সংবাদ দিয়েছেন। তিনি নিজেও একজন বড় ব্যবসায়ী ছিলেন। তার ছিল আন্তদেশীয় বাণিজ্য (International Trade)। ব্যবসায়িক সাফল্য ও সুনামের মাধ্যমে তার আদর্শ, ব্যক্তিত্ব ও সামাজিক নেতৃত্ব বিপুল জনপ্রিয়তা লাভ করে। তিনি কেবল সৎ ও বিশ্বস্ত ব্যবসায়ীই ছিলেন না। বরং সেই সাথে তিনি ছিলেন সুদক্ষ ব্যবসায়ী। তিনি বলেছেন- “সত্যবাদী বিশ্বস্ত ব্যবসায়ী নবী, সিদ্দীক ও শহীদদের সাথী হবে” (সুসতাদরকে হাকিম, জামে তিরমিযি)

নেতৃত্ব দিতে হবে, সহকর্মীদের প্রতি সহমর্মিতা থাকতে হবে। কল্পনা করতে হবে। কল্পনা জ্ঞানের চেয়েও গুরুত্বপূর্ণ। মনে রাখার কৌশল জানতে হবে। ভারতের শকুন্তলা দেবী শৈশব থেকে তখন পর্যন্ত কম্পিউটারের মত দ্রুত গতিতে যে কোন গণনা ও ক্যালকুলেশনের সামাধন করে দিতে পারেন। তাই তিনি শুধু ভারত নয়, ইউরোপ, আমোরিকায়ও হিউম্যান কম্পিউটার হিসেবে অভিহিত হয়েছেন।

বীমা কর্মী ও কর্মকর্তার রাগ নিয়ন্ত্রণ করতে হবে। হাসিমুখে কথা বলতে হবে। মুচকি হাসতে হবে। আশাবাদী ও প্রতিজ্ঞ হতে হবে। কোন হীনমন্যতা মনে যাতে বাসা বাধতে না পারে সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে। এটা আপনার সাফল্যের পথে অন্তরায় নয়। নেপোলিয়ন বেটে ছিলেন। মহীয়সী হেলেন কেলার অন্ধ ও বধির ছিলেন।

আমি পারব না, আমার দ্বারা হবে না, নেতিবাচক কথা বর্জন করতে হবে। সফল হওয়ার জন্য মেডিটেশন/যোগব্যায়ামের মাধ্যমে শক্তি অর্জন করতে হবে এবং কাজে লাগাতে হবে।

অসম্ভবকে বিদায় করুন:

অসম্ভব সম্পর্কে বহু প্রেরণদায়ক বইয়ের লেখক নেপোলিয়ন হিলের মন্তব্য স্মতর্ব্য। তরুন বয়সে তার ইচ্ছে ছিল একজন লেখন হওয়ার। এ লক্ষ্য অর্জনে তাকে শব্দ চয়নে দক্ষ হতে হবে। যেহেতু তিনি গরীবের ছেলে ভালো শিক্ষা ও ছিল না। তাই তার বন্ধুরা বলেছিল তার স্বপ্ন পূরণ হওয়া অসম্ভব। তিনি অভিধানে থাকা অসম্ভব কথাটা ছুরি দিয়ে কেটে ফেলে ছিলেন। বর্তমানকে কাজে লাগাতে হলে অতীতে করে আসা ভুলগুলো পুনরায় যেন না হয় তা খেয়াল রাখতে হবে।

লেখক: মূখ্য নির্বাহী কর্মকর্তা, জেনিথ ইসলামী লাইফ ইন্স্যুরেন্স লিমিটেড।zaman15april@gmail.com