রিয়াজুল ইসলাম রিয়াজ:
ভূমিহীন আশ্রয়হীন অসহায় মানুষদের বসবাসের জন্য নির্মিত স্বপ্ননগর এখন দুঃস্বপ্নে সয়লাব হয়ে উঠেছে। গাঁজা মদ ইয়াবা সেবনের রীতিমত আখড়ায় পরিনত হয়ে গেছে এই প্রকল্প এলাকা।
উঠতি বয়সী তরুন তরুনীদের নির্ভয়ে বেহায়াপনা ও অশ্লীল পদচারনায় মুখরিত থাকে সকাল থেকে গভীর রাত পর্যন্ত। সেই সাথে একান্তে সময় কাটানোর জন্য ব্যাঙ্গের ছাতার মত গজিয়ে ওঠা কথিত কফি হাউজ নোংরামীতে যোগ করেছে বাড়তি মাত্রা।
ফরিদপুর জেলার আলফাডাঙ্গা উপজেলার গোপালপুর ইউনিয়নের কাতলাসুর গ্রামের চরাঞ্চলে আশ্রয়হীন প্রকল্প স্বপ্ননগর।
উপজেলার আশ্রয়হীন ভিটেমাটি হারা মানুষদের সরকারী বরাদ্দকৃত আবাসন এলাকায়, মাদক সেবন, বহিরাগত বখাটের উৎপাতে অতিষ্ঠ হয়ে উঠেছে। মধুমতি নদী তীরবর্তী এই স্থানটিতে সরকারী ভাবে ঘর বাড়ি রাস্থা ঘাট নির্মান করার ফলে ধীরে ধীরে জনপদে রুপ নেয়। সেই সাথে এলাকা ও বাইরের দর্শনার্থীর আগমনে বিনোদন কেন্দ্রে পরিনত হযে ওঠে।
কাতলাসুরের কৃষি উদ্যোগ্তা দেলোযার হোসেন জানান, স্বপ্ননগর তৈরী হওয়ার পর এখানকার মানুষ শান্তিতে ছিল। কিন্তুু বহিরাগতদের আনাগোনায় বিশৃংখলা ও অপরাধমুলক কর্মকান্ডও বাড়তে থাকে। দুরদুরান্তের অচেনা অজানা লোকেরা নদীর কুল ও অন্যান্য স্থানে মাদসেবন, মারামারি, নারীসঙ্গ সহ অনৈতিক কার্যকলাপ করে। আমাদের গ্রামের ঐতিহ্য ও সুনাম নষ্ট হচ্ছে এহেন কার্যকলাপে। প্রশাসনের সু দৃষ্টি কামনা করেন দেলোয়ার।
কাতলাসুর গ্রামের কৃষক মোহাব্বত মোল্যা জানান, স্কুল কলেজ পড়ুয়া ছেলে মেয়েরা মটরসাইকেল চেপে দুরদরান্ত থেকে এখানে আসে। উদোম ঘুরাঘুরি কথিত কফি হাউজে বিরাম হীন আড্ডায় মেতে থাকে তারা। মাদক সেবনও চলে দেদারছে। সেই সাথে চলে অনৈতিক কার্যকলাপও। স্বপ্ননগরে ঘুরতে আসে বেশিরভাগই তরুন তরুনী। চালচলন, কথা বার্তায় লাজ লজ্জাহীন ভয় ডরহীন একটা প্রজন্ম এখানকার নিয়মিত কাষ্টমার। এমন বিস্তর অভিযোগ এখানকার স্থানীয় আরো বাসিন্দাদের।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক বাসিন্দা জানান, সন্ধ্যার পরে এই বিস্তীর্ন এলাকায় যেখানে সেখানে চলে মাদক সেবন। ফরিদপুরের আলফাডাঙ্গা ও নড়াইলের লোহাগড়ার সীমান্তে বিস্তীর্ণ চরাঞ্চল ও দুর্গম এলাকা হওয়ায় এক প্রকার বাঁধাহীন ভাবে চলে অনৈতিক কার্যকলাপ। নির্ভয়ে চলে গাজা মদ ইয়াবা ফেনসিডিল সেবনের রমরমা আসর। স্বপনগরের বাসিন্দারা হতদরিদ্র হওয়ায় মুখ খুলতে সাহস পাননা। প্রেমিক প্রেমিকা বা যুগল কেউ ঘুরতে আসলে বিশেষ নজরে রাখে একটি চক্রটি। সন্ধ্যার পর পরই যুগল দর্শনার্থীদের আটকে দিয়ে ব্ল্যাকমেইল করে নগদ অর্থ, মোবাইল ছিনিয়ে নেয়ার অভিযোগও রযেছে বিস্তর। স্থানীয় ভাষায় এই হয়রানি ও বিড়ম্বনার নাম ”কট’।
এলাকাবাসী সুত্রে জানা যায়, গত ১৭ সেপ্টেম্বর বেলা ২ টায় বখাটেদের উৎপাতের স্বীকার হন পার্শ্ববর্তী কুচিয়াগ্রামের শাকিব নামে এক তরুন ও তার বান্ধবী। এ সময় বখাটের ছোড়া গুলিতে আহত হন হাফিজুর রহমান ও খাইরুল ইসলাম নামে দুই তরুন। উক্ত গোলাগুলির ঘটনায় সামিউল ইসলাম অপি ও পৈাচ্যনামে ২ জনকে আটক করে থানায় সোপর্দ করে স্থানীয় জনতা। এছাড়া বিতর্কিত কফি হাউজ স্বপ্নকাননের মাদক সেবন ও অনৈতিক কর্মকান্ডের প্রতিবাদ জানান তারা। অপ্রীতিকর এই ঘটনায় এখনো আতঙ্কে দিন কাটছে কাতলাসুর ও আশেপাশের মানুষের মাঝে। সাধারন মানুষের মাঝে ভীতির সঞ্চার হয়েছে। মাদক, বেয়াপনা, উচ্ছৃংলতায় উদ্বিগ্ন থাকলেও গুলির ঘটনায় ভীত ও সন্ত্রস্ত হয়ে পড়েছে এলাকাবাসী।
স্বপ্ননগরে আড্ডা দেয়া বা ঘুরতে আসে বেশিরভাগই তরুন তরুনী। তরুনদের নীতি নৈতিকতা বিবর্জিত আচরন ও মাদক সেবনের বিষয়ে, আলফাডাঙ্গা সরকারী কলেজের সমাজ বিজ্ঞান বিভাগের সহকারী অধ্যাপক প্রবীর কুমার বিশ্বাস বলেন, নৈতিকতার অবক্ষয়, সামাজিক মুল্যবোধের স্থলন ও অবাধ তথ্য প্রযুক্তির অপব্যবহারের ফলে অপরাধে জড়াচ্ছে তরুনরা। সেই সাথে সামাজিক মাধ্যমে প্রচারিত বিপদগামী ট্রেন্ডিং প্রভাবিত করছে বর্তমান প্রজন্মকে। যা ভবিষ্যতের
জন্য হুমকি স্বরুপ। সামাজিক বিচ্যুতি ও অপরাধ থেকে উত্তরণে ধর্মীয় বিধি বিধান মান্য ও অভিভাবকদের সন্তানদের প্রতি আরো বেশি যত্নবান ও সজাগ দৃষ্টি রাখার উপর গুরুত্বারোপ করেন প্রবীর কুমার বিশ্বাস।
সংশ্লিষ্ট ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য মোঃ বিল্লাল জানান, বাইরের লোকজন এই এলাকার সুনাম নষ্ট করছে। প্রশাসন পদক্ষেপ নিলে সুফল আসবে। আমরা প্রশাসনকে সর্বোচ্চ সহযোগীতা করবো।
সরকারী এই আবাসন প্রকল্প এলাকার শৃংখলা ফিরিয়ে আনার ব্যাপারে ২ নং
গোপালপুর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান খান সাইফুল ইসলাম বলেন, গোলাগুলির খবর শুনেছি। সেখানের বিশৃংখলার বিষয়ে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার নির্দেশনা পেলে আমরা পদক্ষেপ নেব।
আলফাডাঙ্গা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সারমীন ইয়াসমীন বলেন, স্বপ্ননগরের বিশৃংখলা ও মাদকের বিষয়ে কেউ অভিযোগ জানালে আমরা প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেব।