সেলিনা বেগম,বিশেষ প্রতিনিধিঃ
সংবাদ প্রকাশের সন্দেহের জের ধরে ফরিদপুরের আলফাডাঙ্গায় সাংবাদিক মুজাহিদুল ইসলাম নাঈমকে পূর্বপরিকল্পিত ভাবে পিটিয়ে গুরুতর জখম করার ঘটনায় মামলা হয়েছে।
মঙ্গলবার (২ আগস্ট) সকালে সাংবাদিক মুজাহিদুল ইসলাম নাঈম নিজেই বাদী হয়ে আলফাডাঙ্গা থানায় এ মামলাটি দায়ের করেন। মামলা নং- ০৩।
মামলায় আলফাডাঙ্গা পৌরসভার মেয়র সাইফুর রহমানের আপন ছোট ভাই জাপান মোল্যা (৪৫) ও উপজেলার বুড়াইচ এলাকার শাহাদাৎ হোসেনের স্ত্রী পারুল বেগম (৫০) নামে এক নারীকে এজাহারভুক্ত আসামি করা হয়েছে। এছাড়াও মামলায় অজ্ঞাত আরও ৪-৫ জনকে আসামি করা হয়।
এদিকে মঙ্গলবার সকাল ১১টায় মামলার এজাহারভুক্ত আসামী পারুল বেগমকে গ্রেফতার করে আদালতে পাঠিয়েছেন পুলিশ। আদালত মামলার শুনানি শেষে আসামী পারুল বেগম এর জামিন না মুঞ্জুর করে জেলহাজতে প্রেরণ করেন।
তবে মামলার মূলহোতা জাপান মোল্যা ঘটনার পর থেকে গাঁ ঢাকা দিয়েছেন।
এরআগে সোমবার (১ আগস্ট) দুপুরে আলফাডাঙ্গা পৌরসভার পরিবহণ বাসস্ট্যান্ডে এ ঘটনা ঘটে। আহত মুজাহিদকে স্থানীয়রা উদ্ধার করে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের জরুরি বিভাগে নেওয়া হলে তার শারীরিক অবস্থার অবনতি হলে তাকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে স্থানান্তর করা হয়। বর্তমান তিনি সেখানে ১০১ নং ওয়ার্ডের ১৯ নম্বর বেডে চিকিৎসাধীন রয়েছেন।
মুজাহিদ দৈনিক ঢাকাটাইমস পত্রিকার নিজস্ব প্রতিবেদক ও আলফাডাঙ্গা প্রেসক্লাবের সাংগঠনিক সম্পাদক হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন।
প্রত্যক্ষদর্শী সূত্রে জানা গেছে, আলফাডাঙ্গার রাজধানী পরিবহনের কাউন্টারে টিকেট কিনতে যান রমিজ নামের এক যুবক। তিনি ঢাকার একটি টিকেটের দাম পরিশোধ করে বাসে ওঠেন। বাস ছাড়ার আগ মূহুর্তে ‘ক্যাশ কাউন্টার’ থেকে বলা হয় রমিজ টিকিটের টাকা দেননি। তাই তাকে ঢাকায় যেতে দেয়া হবে না। বিষয়টি জানিয়ে মুজাহিদের সহযোগীতা চান রমিজ। ঘটনাস্থলে এসে বিষয়টির মিমাংসা করার কথা বলতেই সাংবাদিক মুজাহিদের ওপর চড়াও হয় কাউন্টারের ম্যানেজার জাপান ও তার সহযোগীরা। জাপান আলফাডাঙ্গা পৌরসভার মেয়র সাইফুর রহমানের ছোট ভাই। কথাকাটাকাটির এক পর্যায়ে মুজাহিদকে বেধড়ক পেটানো হয়। এতে তিনি গুরুতর আহত হন। এসময় পাশে থাকা লোকজন এগিয়ে এলে তাদের উপরও চড়াও হন জাপান ও তার সহযোগিরা।
স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, সাংবাদিক মুজাহিদের ওপর হামলাকারী জাপান মোল্যার স্ত্রী সোহানা বেগম গত ৭জুন বিষপান করে আত্মহত্যা করে বলে অভিযোগ উঠে। এ ঘটনা নিয়ে তখন বিভিন্ন পত্রপত্রিকায় সংবাদ প্রকাশিত হয়। সংবাদ প্রকাশের বিষয়টি নিয়ে জাপান সাংবাদিক মুজাহিদকে সন্দেহ করে তার ওপর ক্ষিপ্ত হয়। তবে সাংবাদিক মুজাহিদের দাবী, তিনি ওই ঘটনা নিয়ে কোন সংবাদ প্রকাশ করেননি।
মুজাহিদ এখন কিছুটা আশঙ্কামুক্ত জানিয়ে চিকিৎসকের বরাত দিয়ে তার স্বজন আকিবুর রহমান বলেন, ‘সোমবার রাতেই উন্নত চিকিৎসার জন্য মুজাহিদকে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। তার সারা শরীরে আঘাতের প্রচন্ড ব্যথা রয়েছে। বাম হাতে গুরুতর জখম রয়েছে। তবে ডাক্তার বলছেন ভয়ের কিছু নাই, এখন সে কিছুটা আশঙ্কামুক্ত।’
আলফাডাঙ্গা প্রেসক্লাবের সভাপতি সেকেন্দার আলম জানান, ‘মুজাহিদ ঢাকায় চিকিৎসাধীন থাকলেও সেখান থেকে তার স্বাক্ষর করা কাগজপত্র নিয়ে এসে আমার মাধ্যমে থানায় এজাহার দাখিল করেছি। পরে মামলা রেকর্ড হয়েছে।’
আলফাডাঙ্গা থানা অফিসার ইনচার্জ মো. ওয়াহিদুজ্জামান জানান, ‘সাংবাদিককে পিটিয়ে আহত করার ঘটনায় থানায় মামলা হয়েছে। মামলায় একজনকে গ্রেফতার করে আদালতে প্রেরণ করা হয়েছে। মামলার প্রধান আসামিকে গ্রেফতারের জোর চেষ্টা চালানো হচ্ছে।