মো: ইকবাল হোসেন :
ফরিদপুরের আলফাডাঙ্গা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স কর্মকর্তা ও কর্মচারীল বেতন ভাতা বন্ধ রয়েছে দুই মাস।
অনেক কর্মকর্তা কর্মচরী অর্থের অভাবে মানবেতর জীবনযাপন করছে। অপরদিকে ২০২৪-২৫ অর্থ বছরে এমএসআর অর্থ বরাদ্দ থাকা সত্ত্বেও উপজেলা স্বাস্থ্য ও পঃপঃ কর্মকর্তা না থাকার কারণে ওষুধের টেন্ডারসহ অন্যন্ন অর্থনৈতিক কাজকর্ম বন্ধ রহিয়াছে। ফলে হাসপাতালের ওষুধ সংকট দেখা দিয়েছে। অনেক রোগী সরকারি ওষুধ থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। এর প্রতিকার চেয়ে গতকাল শনিবার ফরিদপুর সিজিল সার্জন বরাবর লিখিত আবেদন করেছেন বর্তমান উপজেলা স্বাস্থ্য ও পঃ পঃ কর্মকর্তা (ভারপ্রাপ্ত) ডাঃ আবিদ হাসান।
উপজেলার চরডাঙ্গা থেকে শনিবার সকালে মাবিয়া বেগম এসেছেন বুকের ব্যাথা নিয়ে। ডাক্তার দেখিয়ে চিকিৎসাপত্র নিয়েছেন। ছোট একটি স্লিপ ধরিয়ে চিকিৎসক বলল হাসপাতাল থেকে ওষুধ নিয়ে নিতে। কাউন্টারে গিয়ে জানতে পারে কোনো ওষুধ নেই। বাধ্য হয়ে বাহির থেকে ওষুধ ক্রয় করতে হয়েছে মাবিয়া বেগমের।
দিনমজুর করিম ব্যাপারী এসেছেন হেলেঞ্চা গ্রাম থেকে ডাক্তার দেখিয়ে তিনিও সরকারি কোনো ওষুধ পাননি। মাবিয়া বেগমের মতো বাহির থেকে ওষুধ ক্রয় করে নিয়েছেন। এনাদের শতশত রোগী সরকারি ওষুধের আশায় আসলেও সামান্ন কিছু ওষুধ ছাড়া সকল ওষুধ বাহিরের ফার্মেসী থেকে ক্রয় করতে হচ্ছে।
অফিস সহকারী ইউনুচ মিয়া চার ছেলে মেয়েই লেখাপড়া করে। তার বেতনের টাকায় চলে সংসার। দুই মাসের বেতন না পেয়ে মানবেতর জীবন যাপন করছে। তিনি বলেন, উপজেলা স্বাস্থ্য পঃপঃ কর্মকর্তা না থাকায় আমারা দুই মাস ধরে বেতন পাচ্ছি না।
এ্যাম্বুলেন্স চালক মো.শহিদুল ইসলাম তিন মেয়ে স্ত্রী নিয়ে তার সংসার দুই মেয়ে হাইস্কুলে পড়ালেখা করে। তিনি বলেন, দুই মাসের বেতন ভাতা না পেয়ে মেয়েদের প্রাইভেটের বেতন দিতে পারছিনা। ডিসেম্বর মাসে সবার ফাইনাল পরিক্ষা যদি মাস্টারের মাসিক বেতন না দিতে পারি তাহলে বড় মুসকিলে পড়ে যাবো। এদিকে বাজারে দোকান বাকি হয়েগেছে এভাবে চলতে থাকলে ঋণগ্রস্ত হয়ে যাবো। আমার ছোট কর্মচারী এর দুরুত্ব সমাধান চাই।
আলফাডাঙ্গা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নামেই ৫০ শয্যার হাসপাতাল। নেই অবকাঠামো ও জনবল। রোগী আছে, চিকিৎসক নেই, অনেক ওষুধ ফুরিয়ে গেছে, খুঁড়িয়ে চলছে স্বাস্থ্যসেবা। অক্টোবর মাস থেকে বেতম ভাতা পাচ্ছেনা কর্মকর্তা, কর্মচারীরা। বেতন না পেয়ে মানবতের জীবন যাপন করছে অনেক কর্মচারী। চিকিৎসা নিতে আসা লোকজন নানা ধরনের হয়রানির শিকার হচ্ছেন। কয়েক মাস ধরে মাত্র চারজন চিকিৎসক ও দুই সেকমো দিয়ে চলছে চিকিৎসা কার্যক্রম। হাসপতালের এক্স-রে মেশিন অনেক আগেই বিকল হয়ে পড়ে আছে। নেই কোনো টেকনিশিয়ান। বাড়তি টাকা খরচ করে রোগীদের প্রাইভেট ক্লিনিক থেকে এক্স-রে করতে হচ্ছে। ছোটখাটো অস্ত্রোপচারের জন্য রোগীদের যেতে হচ্ছে সদর হাসপাতালে কিংবা প্রাইভেট ক্লিনিকে। বেহাল হাসপতালটি ফরিদপুরের আলফাডাঙ্গা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, নানা দুর্নীতি অভিযোগে দফায় দফায় ছাত্র আন্দোলন হয় সাবেক আলফাডাঙ্গা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. নাজমুল হাসানের বিরুদ্ধে। এ ঘটনার পর গত মাসেই তাকে বদলী করা হয়েছে। আলফাডাঙ্গা উপজেলাতে প্রায় দুই লক্ষ লোকের বসবাস। তাদের চিকিৎসা সুবিধার জন্য রয়েছে ৫০ শয্যার একটি মাত্র হাসপাতাল। দূরুত্ব কম হওয়ায় পাশের উপজেলা বোয়ালমারী ও কাশিয়ানীর থেকেও অনেক রোগী আসেন আলফাডাঙ্গা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে। অথচ চিকিৎসক সংকট ও ওষুধ সংকটে ধুঁকে ধুঁকে চলছে হাসপাতালের সেবা কার্যক্রম। অন্যান্য জনবল সংকটও রয়েছে। চিকিৎসক ও নার্সদের বেশ কিছু কোয়ার্টার এখন আর ব্যবহার হচ্ছে না। চিকিৎসক না থাকায় কোয়ার্টার এখন বসবাসের অযোগ্য হয়ে পড়েছে।
হাসপাতালে মোট ২২ জন চিকিৎসক থাকার কথা , দন্ত চিকিৎসকসহ আছেন চার জন। এর মধ্যে শিশু বিশেষজ্ঞ ডাক্তার সপ্তাহে তিন দিন অফিসে আসেন। বিভিন্ন হাসপতাল ও স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ে পেষণে রয়েছে পাঁচজন চিকিৎসক। কিছু দিনের জন্য স্বাস্থ্য ও প.প.কর্মকর্তা বদলী হওয়ার জন্য মেডিকেল অফিসার তানজিন জাহান জিনিয়াকে কে প্রশাসনিক দায়িত্ব পালন করতে দেওয়া হলেও তিনি চাপ সহ্য করতে না পেরে চলতি মাসে মাঝামাঝি সময়ে বদলী হয়ে গেছে। বর্তমান স্বাস্থ্য ও পঃপঃ কর্মকর্তার দায়িত্ব পালন করছে আবিদ হাসান। বিভিন্ন সময় তাকে উপজেলা ও জেলা সিভিল সার্জন অফিসে যেতে হচ্ছে কাজে। গাইনি, চক্ষু, কার্ডিওলজি, অর্থপেডিক্স, শিশু, ইএনটি, মেডিসিন, চর্ম ও যৌন, এমও হোমিওপ্যাথিক চিকিৎসক পদ দীর্ঘদিন ধরে শূন্য রয়েছে।
পাঁচজন পরিচ্ছন্নতাকর্মী থাকার কথা, আছেন দুইজন। এ ছাড়া চতুর্থ শ্রেণির কর্মচারীর সংকটও রয়েছে। মোটকথা হাসপাতালটি চালু রেখেছেন চারজন চিকিৎসক ও দুই জন সেকমো । হাসপাতালালের বহির্বিভাগ ও জরুরি বিভাগ থেকে প্রতিদিন প্রায় সহ¯্রাধিক ব্যক্তি চিকিৎসা নেন হাসপাতালে। চিকিৎসক সংকট থাকায় যে কোনো রোগী এলেই জরুরি বিভাগ থেকে তাদের স্থানন্তর করা হয় ফরিদপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে। গুরুতর রোগী স্থানান্তর নিয়ে বিপাকে পড়ে যায় দরিদ্র পরিবারগুলো।স্থানীয় হাসপাতালে চিকিৎসা না হওয়ায় মৃত্যুঝুঁকিতে পড়েন অনেক রোগী। হাসপাতালে নেই কোনো ডিজিটাল এক্স-রে মেশিন। পুরাতন এক্স-রে মেশিনটি অকার্য হয়ে পড়েছে।
আলফাডাঙ্গা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে মেডিকেল অফিসার (বর্তমান দায়িত্বপ্রাপ্ত পরিচালক) ডা. আবিদ হাসান জানান, জনবল সংকট ও প্রয়োজনের তুলনায় খুব কম চিকিৎসক রয়েছেন। স্থায়ী ভাবে স্বাস্থ্য ও পঃপঃ কর্মকর্তা না থাকায় দুই মাস ধরে হাসপাতালের কর্মকর্তা ও কর্মচারীরা বেতন ভাতা থেকে বঞ্চিত রয়েছে। ওষুধের ভান্ডার শেষ হয়ে যাচ্ছে। অনেক ওষুধ ফুরিয়ে যাচ্ছে সেখানেও টেন্ডার দেওয়া যাচ্ছে না। এর প্রতিকার চেয়ে ফরিদপুর সিভিল সার্জন বরাবর আবেদন করেছি। কর্তপক্ষের কাছে চিকিৎসক সংকট নিরসনের আবেদন করা হয়েছে। তারা আশ্বস্ত করেছেন। আমাদের হাসপাতালে চিকিৎসকসহ শূন্যপদে জনবল বাড়াবেন।স্থানী একজন স্বাস্থ্য পঃপঃ কর্মকর্তা দিবেন।আমারা সেই আশায় বুক বেধে আছি।
বিষয়টি নিয়ে কথা হয় ফরিদপুরের সিভিল সার্জন সাজেদা বেগম পলিনের সঙ্গে। সমকালকে তিনি বলেন, আলফাডাঙ্গা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসক ও জনবল সংকট, বেতন-ভাতা, ওষুধ না থাকার বিষয়ে আমরা অবগত রয়েছি। বারবার নতুন করে চিকিৎসক চাওয়া হচ্ছে। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের ঊধ্বর্তন কর্মকর্তাদের বিষয়টি জানানো হয়েছে। ডিজি অফিস থেকে স্বাস্থ্য ও পঃপঃ কর্মকর্তা আলফাডাঙ্গাতে পাঠালে অনেকেই আসতে অসম্মতি জানিয়েছে। সেখানে আমাদের কোনো হাত নেই। পাশ্ববর্তী বোয়ালমারী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স থেকে একজন চিকিৎসককে আলফাডাঙ্গায় সংযুক্ত করা হয়েছে। প্রেষণে থাকা চিকিৎসকগণ স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় থেকে নিজেদের মতো করে বদলী হয়েছেন। সেখানে আমাদের কোনো হাত নেই।