রিয়াজুল ইসলাম রিয়াজ:
বহু পুষ্টিগুণে সমৃদ্ধ ড্রাগন ফল চাষ করে সাড়া ফেলেছেন তৌহিদুল ও জাহিদুল নামে দুই ভাই। তারা ফরিদপুরের আলফাডাঙ্গা উপজেলার গোপালপুর ইউনিয়নের মধুমতি নদী তীরবর্তী কাতলাসুর গ্রামের আব্দুর রহমান মোল্যার দুই ছেলে।
২০২০ সালে করোনাকালে দুই ভাই বাবাকে সঙ্গে নিয়ে শুরু করেন বিদেশি ফল ড্রাগন চাষ। প্রথমে তারা ঝিনাইদাহের কালিগঞ্জ থেকে এক হাজার চারা এনে ছোট পরিসরে শুরু করেন। পরবর্তীতে বাড়াতে থাকেন চারা ও জমির পরিমাণ৷ এখন দুই ভাইয়ের ড্রাগন প্রকল্পে জমির পরিমাণ দেড় একর। তাদের ড্রাগন বাগানে রয়েছে ৮ হাজার গাছ।
তোহিদুল চাকরির সুবাদে এলাকার বাইরে থাকায় জাহিদুলকেই করতে হচ্ছে ড্রাগন বাগানের সব তদারকি ও পরিচর্যা। তিনি জানান গত বছর ভাল ফল আসায় বিক্রিও ভালো ছিল। এবার আবহাওয়া অনুকূলে না থাকায় লাভের পরিমাণ কম আসবে।’ তারপরও ১২ লাখ টাকার মতো ড্রাগন বিক্রি করতে পারবেন বলে জানান তিনি।
ড্রাগন চাষে সার কীটনাশক ও পরিচর্যার বিষয়ে জাহিদুল জানান, ‘আমরা জৈব সার ব্যবহার করি। চারা গাছ লাগানোর সময় জৈব সার ও দানাদার বিষ ব্যবহার করেছিলাম। তারপর থেকে জৈব সার প্রতি বছর প্রয়োগ করছি। অতিমাত্রায় ক্ষতিকারক কীটনাশক (টনিক) ব্যবহার না করার কারণে আমাদের বাগানের ফল ছোট বা মাঝারি আকারের৷ আমরা কোনোভাবেই ক্ষতিকারক কেমিক্যাল ব্যবহার করি না। ড্রাগন ফলের চারা নভেম্বরে রোপন করলে আগস্ট-সেপ্টেম্বর নাগাদ ফল আসতে শুরু করে। একবার রোপনে ১০-১২ বছর ফল পাওয়া যায়।
উপজেলার কাতলাসুর গ্রামের ড্রাগন বাগান ঘুরে দেখা যায়, ‘ড্রাগন ফলের পাশাপাশি দুই ভাইয়ের কৃষি খামারে আরও চাষ করছেন থাই প্রজাতির বরই। ড্রাগন বাগানের পাশেই এক একর জমিতে বাণিজ্যিকভাবে বরই চাষ করছেন তারা। প্রতি বছর চার-পাঁচ লাখ টাকা ঘরে তোলেন বরই বিক্রি করে। এ ছাড়া ড্রাগন খেতে পরীক্ষামূলকভাবে চায়না কমলা ও মাল্টা চাষ করছেন। সফলতাও পেয়েছেন তারা। শিগগিরই বাণিজ্যিকভাবে চায়না কমলা ও মাল্টা চাষের পরিকল্পনাও রয়েছে তাদের।
তৌহিদুল ও জাহিদুলের বাবা আব্দুর রহমান বলেন, ‘আমি ছেলেদের সহযোগিতা করছি। আমাদের বাগানে ড্রাগন ছাড়াও কমলা, মাল্টা, পেয়ারা, বেগুনের চাষ করেছি৷ সবজি হিসেবে লাউ ও বেগুনের চাষাবাদও করেছি। বাণিজ্যিকভাবে ড্রাগন ও বরইয়ের পাশাপাশি চায়নিজ কমলা, মাল্টা বাজারজাত করার চিন্তা-ভাবনা আছে৷ লাউ ও বেগুন নিজেদের চাহিদা মেটানোর পরে স্থানীয় বাজারে বিক্রি করি।’
আব্দুর রহমান মোল্যা আরও বলেন, ‘বাগান থেকেই বেশি ড্রাগন বিক্রি হয়। এরপর দিগনগর, গোপালপুর ও আলফাডাঙ্গা বাজারে পাইকারি বিক্রি করি। শুরুর দিকে দেড়শ থেকে ২০০ টাকা কেজি বিক্রি হয়। পরে তা বেড়ে ৩০০ থেকে সাড়ে ৩০০ পর্যন্ত হয়।
আলফাডাঙ্গা উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা তুষার সাহা বলেন, ‘ড্রাগন বিদেশি ফল হলেও দেশি আবহাওয়াতে চমৎকার উৎপাদন হচ্ছে। এটি একাধারে পুষ্টিগুণ সমৃদ্ধ ও বাণিজ্যিক চাষাবাদের উপযোগী। বর্তমানে স্থানীয় পর্যায়ে অনেক উদ্যোক্তা তৈরি হয়েছে। আমরা সার্বক্ষণিক তাদেরকে পরামর্শ দিচ্ছি। বিদেশি ফলের আমদানি হ্রাস পেয়ে ড্রাগন ফলের মাধ্যমে ফল চাষে বৈপ্লবিক পরিবর্তন আসবে বলি আমি বিশ্বাস করি।’
তৌহিদুল ও জাহিদুলের ড্রাগন চাষের বিষয়ে তিনি বলেন, ‘আমরা ওদের বাগানের বিষয়ে নিয়মিত খোঁজখবর রাখছি। কৃষি অফিস থেকে তাদের সর্বোচ্চ পরামর্শ ও সহায়তা দেওয়া হবে৷ আমরা তাদের বাগানও পরিদর্শন করেছি। তারা অল্প সময়েই সফল ড্রাগন চাষি হিসেবে উপজেলায় পরিচিতি লাভ করেছেন। তাদের দেখে অনেকেই কৃষি উদ্যোক্তা হতে আগ্রহ প্রকাশ করবে।